রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়ে মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে তাঁর এক সহযোদ্ধা রাশিয়া থেকে নিহত ওই যুবকের গ্রামের বাড়িতে এই খবর জানান।
নিহত আকরাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, দিনমজুর বাবার সংসারের সচ্ছলতা ও নিজের ভবিষ্যতের আশায় ১১ মাস আগে ধারদেনা করে রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আকরাম। সেখানে যাবার পর আট মাস সেখানকার একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে চাকরি করেন তিনি। আড়াই মাস আগে তিনি রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ছবিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন তিনি।
আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া বলেন, কোম্পানিতে ভালো বেতন না পাওয়ায় দালালের প্রলোভনে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে আকরাম রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শর্ত ছিল যুদ্ধের সম্মুখসারিতে থাকতে হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলেও আকরাম জানিয়েছিলেন, তার আর ফিরে আসার উপায় নেই।
আকরামের মা মোবিনা বেগম বলেন, যুদ্ধ চলাকালে ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও ১৩ এপ্রিল থেকে কোনো যোগাযোগ নেই। শুক্রবার তাঁর এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানান, যুদ্ধে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আকরাম নিহত হয়েছেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, মরদেহটি কোথায় আছে সেটি পরিবারকে প্রথমে শনাক্ত করতে হবে। সেই অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পর তারা ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হন আরেক বাংলাদেশি যুবক ইয়াসিন শেখ। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। পরিবার জানিয়েছিল, ইয়াসিন রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। পরে দালালের খপ্পরে পড়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে ঢাকায় নিয়ে অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর নেন ইয়াসিনকে রাশিয়ায় পাঠানো এজেন্সির লোকজন।
ইয়াসিনের মৃত্যুর পর গত ৭ এপ্রিল জানা যায়, বিদেশে ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা বানাচ্ছে মানব পাচারকারীরা। সেখানে জোর করে চুক্তিনামায় সই করিয়ে পাঠানো হচ্ছে যুদ্ধে। এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ তরুণ এভাবে দেশটিতে গেছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবরও এসেছে। বিষয়টি নজরে আসার পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আন্তর্জাতিক তিন বিমানবন্দরেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়াগামী সন্দেহে ১১ তরুণকে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচ